আমাদের একজন ‘আসাদুজ্জামান নূর’ আছেন
আসাদুজ্জামান নূর – বাংলাদেশের নাট্য ও সংস্কৃতিক অঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, অভিনেতা এবং লেখক। নাট্যঅঙ্গনে তার পরিচিতি এতোটাই জনপ্রিয় যে শুধু ‘বাকের ভাই’ নামটি বললেই তার আর কোন পরিচয়ের প্রয়োজন পড়েনা! হাওয়া মে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দোপাট্টা মলমল কা- গাইতে থাকা রূপালি পর্দার সাধারণ এক পাড়ার মাস্তানের চরিত্রের জনপ্রিয়তা এতোই তীব্র ছিল যে, বাকের ভাইয়ের ফাঁসির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল, সাধারণ দর্শক। পরিচালক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনও করতে হয়েছিল বাকের ভাইয়ের ফাঁসির দৃশ্যটি সম্প্রচারের পর৷ একজন শিল্পী কতখানি অভিনয় প্রতিভার অধিকারী হলে তার অভিনীত চরিত্র পরিচালক ও স্বয়ং তার নিজস্ব ব্যক্তিত্বকেই ছাড়িয়ে যায়, তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ তিনি। যার কারনে আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের হয়ত একজন মার্লোন ব্র্যান্ডো নেই, কোন নাসিরুদ্দিন শাহ নেই, কিন্তু, আমাদের একজন বাকের ভাই আছেন, আমাদের একজন আসাদুজ্জামান নূর আছেন!
সদাহাস্যজ্বল এই গুনী ব্যক্তিত্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলায় ১৯৪৬ সালে আজকের দিনে, ৩১’শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। অভিনয়ে পা রাখার আগে থেকেই তিনি ছাত্র জীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, কাজ করতেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়নে(১৯৬৩)। আসাদুজ্জামান নূর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। রাজনীতি ছাড়াও দীর্ঘদিন সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে নানান সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গেও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭২ সালে, ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’ মঞ্চদলে যোগদানের মাধ্যমে। তাদের ১৫টি নাটকে এখন পর্যন্ত ৬০০ বারের বেশি মঞ্চে অভিনয় করেছেন। ৫০ এর বেশি রেডিওর নাটকেও অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। মঞ্চ, টেলিভিশন, রেডিও ,চলচ্চিত্র সবক্ষেত্রেই তার অভিনয় সদা প্রশংসিত।
১৯৯০-এর দশকে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় টেলিভিশন নাটক “কোথাও কেউ নেই”-তে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বাকের ভাই চরিত্রের জনপ্রিয়তা এতো বেশি ছিলো যে, ফাঁসির দৃশ্য সম্প্রচারের পর বিভিন্ন জায়গায় বাকের ভাইয়ের জন্য মিলাদ মাহফিল ও কুলখানির আয়োজন করা হয়, যা শুধুমাত্র বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল উদাহরণ! কোথাও কেউ নেই ছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য কালজয়ী সব চরিত্র। “অয়োময়”, “এইসব দিনরাত্রি”, “আজ রবিবার”, “শঙ্খনীল কারাগার”, “দহন”, “চন্দ্রকথা” “আগুনের পরশমণি” ইত্যাদি নাটক ও চলচ্চিত্রে তার করা প্রতিটি চরিত্রই কাল্ট ক্লাসিক হয়ে থাকবে আজীবন।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন সফল আবৃত্তিকারও; তার উল্লেখযোগ্য আবৃত্তির মধ্যে রয়েছে “নূরলদীনের সারাজীবন”, “আমার পরিচয়”, “অসমাপ্ত কবিতা” ইত্যাদি।
আসাদুজ্জামান নূর অবদান রেখেছেন সাহিত্যচর্চায়ও। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো “বেলা অবেলা সারাবেলা”, “আবৃত্তির কবিতা”, “নীরালা নীলে”, অনুবাদ ” দেওয়ান গাজীর কিসসা” ইত্যাদি।
সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন! এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য উল্লেখযোগ্য পুরষ্কার!
৭৭তম জন্মদিনে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ কিংবদন্তীকে শোবিজ ইনসাইটের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!