শুধুমাত্র অসাধারণ গায়কই নয় একজন অসাধারণ ফটোগ্রাফার ও
ফারুক মাহফুজ আনাম বাংলা ব্যান্ড গানের সাথে যার সম্পর্ক প্রচন্ড নিবিড়। দেশে এবং দেশের বাইরে সমানভাবে জনপ্রিয় এই শিল্পীকে সবাই জেমস নামেই জানেন। ভক্তরা ভালোবেসে ডাকেন গুরু! মিডিয়াতে চেহারা দেখানোর এই যুগে অনেকটা নিভৃতভাবেই একনিষ্ঠতার সাথে করে চলেছেন শিল্পচর্চা। গোল্ডফিশ মেমোরির এই ভাইরাল সময়েও তেমন প্রচারনা ছাড়াই জেমসের যে কোনো লাইভ কনসার্টে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
সরকারী চাকরিজীবির সন্তান জেমস এর ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল প্রচন্ড ভালোবাসা। বাড়ি পালানো, আজিজ বোডিং এবং শুধুই গান নিয়ে সাধনা আর এভাবেই আমরা পেয়েছি আজকের এই জেমসকে। বাংলাদেশেকে কে ছাপিয়ে বলিউডেও সমানভাবে জনপ্রিয় তিনি। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলাব্যান্ড মিউজিকের সুপারস্টারের এই গল্প সবার জানা।
গায়ক, গীতিকার, সুরকার, গিটারিষ্ট, অভিনেতা, বলিউড নেপথ্য গায়ক হবার পাশাপাশি তার আরেকটি পরিচয় আছে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি জেমসের অন্য একটা অসাধারন শিল্প প্রতিভার ব্যাপারে হয়ত অনেকেই জানেন না। জেমস শুধুমাত্র একজন অসাধারণ গায়কই নয়; তিনি একজন অসাধারণ ফটোগ্রাফার ও! অসাধারন একজন পোট্রেট ফটোগ্রাফার! জেমস ছবি তোলেন স্রেফ শখের বসে, তার আলোকচিত্রে মডেল হয়েছেন জয়া আহসান, হালের মারিয়া নূরসহ বহু ব্যক্তিত্ব! শুধু মানুষ নয়, জেমসের ফটোগ্রাফিতে স্থান পায় শহরতলী, ফুল, গাছ, কিংবা অসাধারন সব কনসেপ্ট! চোখে ধরা পড়া প্রায় সব সুন্দর মুহুর্ত গুলোকেই ফ্রেমবন্দী করে ফেলেন এই নগরবাউল! পোট্রেট ছবি তোলায় তার রয়েছে বিশেষ পারদর্শীতা, জেমসের স্যোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে কি অসাধারন সব পোট্রেট! দেশের বাইরে, লন্ডন, কিংবা ইউরোপের রাস্তায় প্রিয় ক্যামেরা হাতে ঘুরতে ঘুরতে ফ্রেম বন্দি করেন মূর্ত এবং বিমূর্ত সব মুহুর্ত!
ল্যান্ডস্কেপ কিংবা পোট্রেট সবখানেই কি একটা জাদুকরী ব্যাপার পাওয়া যায়। কিভাবে যেন জেমসকে খুঁজে পাওয়া যায়।
ফটোগ্রাফী প্রদর্শনী করবেন কিনা এমন প্রশ্নে জেমস বার বার ই বলে এসেছেন, উনি ছবি তোলেন স্রেফ শখের বসে! মিউজিকের বিরতিতে কিংবা একান্ত অবসরে ক্যামেরা হাতে বের হয়ে পড়েন, তাই নিজের ছবি গুলো কে শুধুমাত্র শখের বহিঃ প্রকাশ হিসেবে রাখতে চান জেমস! কোনো প্রদশর্নী নয়, কোনো আগাম প্রচারণা নয়, তবুও জেমস প্রদীপ এর আড়ালে থাকা এক শৈল্পিক ফটোগ্রাফার! যিনি শুধু গিটার নয়, ক্যামেরার লেন্স দিয়েও আঁকতে পারেন সিম্ফনি!
জেমস এর কোনো পোট্রেট বা ফটোগ্রাফ যখনই উপস্থিত হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়, ভক্তদের উচ্ছ্বাস আর উৎফুল্লতাই বলে দেয়, গুরু কতো বড় মাপের একজন ফটোগ্রাফার!
ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে নিতে নারাজ জেমস সু্যোগ পেলে কবি নির্মলেন্দু গুনের ছবি তুলতে চান! ছোটো বেলা থেকেই সীমাহীন এক্সট্রোভার্ট জেমস কে থামানো যায় নি কোথাও! কোনো বাঁধ-বিচার কিংবা জাগতিক ভয়-সংকোচ, গুরুকে আটকে রাখা যায় নি কোনো বেড়াজালে! সুতো কাটা ঘুড়ির মতো গুরু উড়েছেন, উড়িয়েছেন ভক্তকূল কে!
আজিজ বোডিং, বাবাকে ছেড়ে পরিবার ছেড়ে গান আর আকাশে ওড়ার টানে বার বার ছেড়েছেন আপন ঘর! রং চটা বলিউডের মোহও আটকাতে পারেনি জেমস কে! জেমস এর তোলা ছবি গুলো বিশ্লেষণ করলেও গুরুর দস্যিপনা সবার আগে চোখে উঠে আসে! প্রায় একশর বেশি মডেল ফ্রেমবন্দী হয়েছেন গুরুর লেন্সে! আর পোট্রের্ট গুলোর কি কনসেপ্ট, যেনো লিওনার্দো দ্যা ভিন্ঞ্চির আঁকা শিল্পকর্ম! জেমস এর তোলা পোট্রেট দেখলে যে কেউ বিনা বাক্যে রায় দেবে, প্রতিটা ফ্রেম একটা জীবন্ত গল্প।
এই বয়সে এসে এখনও জেমস সু্যোগ পাওয়া মাত্র বেরিয়ে পড়েন ছবি তোলার নেশায়! গলায় ক্যামেরা আর চোখে মুহূর্ত ধরার নেশা তার!
অদূর ভবিষ্যতে জেমসের ফটোগ্রাফি হয়তো ইতিহাস হবে, কোনো এক্সিবিশন, কিংবা বিশ্বের কোনো তাবড় মিউজিয়াম এ শোভা পাবে জেমস এর ফটোগ্রাফি, আর ইতিহাস বলে যাবে, আমরা জন্মেছিলাম জেমস এর সময়ে….!