শাকিবের হাত ধরে বাংলা সিনেমার নবজাগরণ
জুন,২৩ থেকে জুন,২৪ এই এক বছর বাংলা চলচ্চিত্রে আমরা দেখেছি এক অন্য ও অনবদ্য শাকিব খানকে। নিজের খোলস থেকে বের হয়ে কিভাবে অভিনয় শিল্পকে চূড়ান্ত গন্ডিতে নিয়ে যাওয়া যায় তাই যেন বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এই এক বছর শাকিব খান পেয়েছেন অভূতপূর্ব সাফল্য।
শাকিব খান অভিনীত তিনটি সিনেমা- ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’ ও ‘তুফান’ – বক্স অফিসে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। তাঁর সিনেমাগুলির মোট গ্রস কালেকশন হয়েছে শত কোটি টাকারও বেশি, যা বাংলা সিনেমার জন্য একটি মাইলফলক ও অভাবনীয় সাফল্য। এই সাফল্য শুধু বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সমৃদ্ধি ঘটায়নি বরং বিশ্ববাজারে দেশীয় সিনেমার সম্ভাবনাকেও উজ্জ্বল করেছে। চলচ্চিত্র শিল্পে এনে দিয়েছে প্রাণ ও যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
প্রিয়তমার সাফল্য গাঁথা
২০২৩ সালের ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় শাকিব খানের সিনেমা ‘প্রিয়তমা’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন হিমেল আশরাফ এবং প্রযোজনা করেছেন আরশাদ আদনান। মুক্তির পরপরই দেশ-বিদেশের দর্শকদের মাঝে সিনেমাটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। প্রযোজনা সংস্থা ভার্সেটাইল মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী ৪২ কোটি টাকার গ্রস কালেকশন করতে সক্ষম হয়। তুফান মুক্তির আগে এই সিনেমাটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক আয় করা সিনেমা হিসেবে পরিচিতি পায়।
‘প্রিয়তমা’ শুধুমাত্র বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করেনি, এটি সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে। চিরাচরিত অভিনয় থেকে বের হয়ে এসে শাকিব খানকে তাঁর ভক্তরা খুজে পান এক অভিনব রূপে। সিনেমাটির গল্প, পরিচালনা এবং শাকিব খানের অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের করে মুগ্ধ। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার সাফল্য বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে এবং বিশ্ববাজারে বাংলা সিনেমার সম্ভাবনার নতুন দ্বার সৃষ্টি করেছে। এরকম একটি সাফল্য প্রমাণ করে যে, বাংলা সিনেমা বিশ্ববাজারে অন্য সিনেমার সাথে প্রতিযোগিতা করতে প্রস্তুত।
রাজকুমারের চ্যালেঞ্জ
‘প্রিয়তমার’ অভাবনীয় সাফল্যের পর, একই টিম ‘রাজকুমার’ নামে আরেকটি সিনেমা নির্মাণ করে। এ বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় শাকিব খানের ‘রাজকুমার’। প্রিয়তমার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা ‘রাজকুমার’ ব্যবসায়িকভাবে ‘প্রিয়তমা’র সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে বরাবরের মতোই সিনেমার গল্প ও শাকিব খানের অভিনয় দর্শককে মুগ্ধ করে। সমালোচকদের মতে অভিনয়ের দিক থেকে ‘রাজকুমার’ ‘প্রিয়তমা’-কেও ছাড়িয়ে যায়।
প্রযোজনা সংস্থা ভার্সেটাইল মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ‘রাজকুমার’ থেকে ২৬ কোটি টাকা গ্রস কালেকশন পাওয়া যায়। এছাড়া প্রোফিট শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বঙ্গ অ্যাপে অবমুক্ত করা হয়, বঙ্গ অ্যাপে প্রকাশের পরপরেই সিনেমাটির ব্যাপক পাইরেসি হওয়া সত্ত্বেও মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয়। পাইরেসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও এই সাফল্য বাংলা সিনেমার জন্য একটি নতুন দিক উন্মোচন করে।
তুফানের তুফান গতির সাফল্য
২০২৪ সালের ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় শাকিব খানের আরেক যুগান্তকারী সিনেমা ‘তুফান’। রায়হান রাফী পরিচালিত ও আলফা আই প্রযোজিত এই সিনেমাটি মাত্র তিন সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটি টাকা গ্রস কালেকশন করতে সক্ষম হয়।
মুক্তির পর থেকে ‘তুফান’ দেশের ১০০টিরও বেশি প্রেক্ষাগৃহে ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাফল্য ও সুনামের সঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল আশা প্রকাশ করেছেন যে, ‘তুফান’ সিনেমাটির গ্রস কালেকশন ৫০ কোটিতে পৌঁছাবে। তবে সিনেমার নায়ক শাকিব খান আশাবাদী তুফান সিনেমার গ্রস কালেকশন ১০০ কোটি পাড়ি দিবে। তুফানের এরূপ যুগান্তকারী জানান দেয় যে, বাংলা সিনেমা শুধুমাত্র দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে।
চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সাফল্য এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এক বছরের মধ্যে শাকিব খানের তিনটি সিনেমা -‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’ ও ‘তুফান’ – গ্রস কালেকশনের মাধ্যমে মোট ১০৩ কোটি টাকা ব্যবসা করেছে। নিঃসন্দেহে যা বাংলা সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় সাফল্য। এই ব্যবসা সফলতা বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রির সমৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে দেশীয় সিনেমার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। দর্শককে করেছে হলমুখী এবং চলচ্চিত্র শিল্পকে করেছে জীবন্ত।
শাকিব খানের এই সাফল্য শুধু বাণিজ্যিক দিক থেকেই নয়, অভিনয়ের দক্ষতার দিক দিয়েও তাঁকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। যে উচ্চতা পৌছানো অনেকটাই অসম্ভব। নায়ক রাজ রাজ্জাকের পর আবারো একজন অতিমানবীয় সুপারস্টারের দর্শন পেয়ে এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি শাকিব খানের প্রতি কৃতজ্ঞ হতেই পারেন। শাকিব খানের পাশাপাশি সমান প্রশংসা দিতে হয় তাঁর সিনেমার পরিচালক ও নির্মাতাদের। শাকিব খানের মতো সম্ভাবনাময় ও যোগ্য একজন নায়ককে যথাযথভাবে পরিচালক ও প্রযোজকগণ কাজে লাগাতে পেরেছেন। তার সিনেমাগুলি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, ভালো গল্প এবং মানসম্পন্ন প্রযোজনা বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে পারে।
শাকিব খানের এই সাফল্য পরবর্তী সিনেমাগুলির জন্য একটি আদর্শ মানদন্ড তৈরি করেছে। আগামী সেপ্টেম্বরে অনন্য মামুনের পরিচালনায় শাকিব খানের নতুন প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা ‘দরদ’ মুক্তি পেতে চলেছে। সিনেমাপ্রেমীদের নজর এখন সেই সিনেমার দিকে। আশা করা যাচ্ছে, ‘তুফান’-এর পর ‘দরদ’ দিয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন বাংলার সুপারস্টার কিং খান।
বাংলা সিনেমার এই উন্নতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিযোগিতামূলক ও শক্ত স্থানে নিয়ে যাবে। সিনেমাপ্রেমীরা ও নেটিজেনরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন শাকিব খানের পরবর্তী প্রকল্পগুলির জন্য, যা বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শাকিব খান এবং বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি নতুন নতুন সাফল্য অর্জন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সিনেবোদ্ধারা।
বিনোদনের নতুন নতুন খবর সবার আগে পেতে ভিজিট করুনঃ
🔵 Facebook: facebook.com/showbizinsightbd